আবিদ হাসান, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ): মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় বয়ড়া-হারুকান্দি (আন্ধামানিক খেয়াঘাট) ইউপি সংলগ্ন পদ্মানদীর নতুন চরে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা ঝাউগাছের সমারোহে ঝাউগাছের বাগান তৈরী হয়। গত কয়েক বছরে সেই চরে বন্যার পানি না ঠায় গাছগুলো বড় হতে থাকে। ঝাউগাছের সাথে চরাঞ্চলের বন থাকায় ঝাউগাছগুলো বাইরে থেকে দেখার উপায় না থাকলেও একটু ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা যায় কয়েক কিলোমিটার এরিয়া জুরে ছোট মাঝারি সাইজের ঝাউগাছ ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। আবার বেশ কিছু ঝাউগাছ কেটে চাষাবাদ ও করছে অনেকে। অসচেতনতা আর অবহেলায় দিন দিন কমছে ঝাউবাগানের গাছগুলো।
সরেজমিনে দেখা যায়, একেকটা ঝাউগাছের উচ্চতা প্রায় ২৫ থেকে ৩০ ফুট। আর মোটাও হয়েছে বেশ। ২৫ থেকে ২৫ জনের একটা দল প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত হাজারের বেশি ঝাউগাছ কেটে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে নিয়ে যাচ্ছে গ্রামের মানুষেরা। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঝাউগাছগুলো জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার আর বিভিন্ন জলাশয়ের কাঠা হিসেবে ব্যবহারের জন্য কেটে ট্রলারে করে নিয়ে যাচ্ছে। এ যেন প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা ঝাউ বনকে ধ্বংস ও লুটের মহোৎসবে মেতেছে তারা।
ঝাউগাছগুলো কেটে নেয়ার সময় এক ট্রলারে করে আসা ৬ জনের মধ্যে একজন রহিমা বেগমের সাথে কথা হয়। তিনি জানান, হারুকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কাছে জানাইছি, তারপর কাটতেছি, বাড়িতে রান্না করার খরি নাই, তাই এইগুলো খরি হিসেবে ব্যবহার করবো। আপনি না করছেন, তাই আর কাটুম না।
আরেক ট্রলারে থাকা ৪ জনের মধ্যে একজন আন্ধারমানিক গ্রামের মজিবর (ছদ্দনাম) জানান, চরে অনেক গাছ, এগুলো কি গাছ, কিসের কামে লাগবো? জানিনা, তাই খরি হিসেবে নিতাছি। আর মাইটেলে কাঠা ফালামু। আমগো গেরামের অনেকেই তো প্রতিদিন নিতাছে। আর নিমুনা।
আরেক ট্রলারে থাকা হারুকান্দি গ্রামের রমজান বলেন, এগুলা জঙ্গল, কাইটা জমি সাফ করতেছি, এখানে চাষবাস করুম। কয়েকমাস ধরেইতো নিতাছে অনেকেই। চেয়ারম্যান জানে।
হারুকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জানান, ঝাউগাছগুলো পাহাড়া দেবে কারা। আর আমি কাটতে বলবো কেন। এগুলো আন্ধারমানিক, দড়িকান্দি গ্রামের মানুষেরা কেটে নিচ্ছে। গাছগুলো যাতে আর না কাটে, সেজন্য দেখি কি করা যায়।
সামাজিক সংগঠন হরিরামপুর শ্যামল নিসর্গের সাধারণ সম্পাদক প্রণব পাল বলেন, প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা বন বা পদ্মারচরে ঝাউগাছ আমাদের দেশের সম্পদ। এগুলো ধ্বংস করা, কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। অবশ্যই প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এগুলো বন্ধ করা হোক।
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শাহরিয়ার রহমান জানান, এ বিষয়ে আমি এসিল্যান্ড কে বলে দিচ্ছি। তিনি আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
মানিকগঞ্জ বন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, চরে প্রাকৃতিক ঝাউবাগান আছে, জানতাম না। এখন আপনার কাছে শুনলাম। প্রাকৃতিক বন যাতে নষ্ট না হয়, এ বিষয়ে ইউএনও মহোদয়ের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।